সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে দুটো পার্থক্য বিরাজমান। এর একটি হলো শিয়া অন্যটি সুন্নি। অনেক নিজকে সুন্নি বলে দাবী করলেও শিয়াদের সাথে সুন্নিদের পার্থক্য বা মতবেদ কি কারণে সেটা জানেনা। আশুরা এলে আমরা তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে শিয়াদের অস্তিত্ব পাই। আর মাঝে মাঝে মসজিদে নামাজ পড়ার সময় দেখা মিলে শিয়াদের। এ ছাড়া ইরানের কথা আসলে শিয়াদের কথা মাথায় আসে। বস্তত শিয়া এবং সুন্নীর মধ্যে তেমন পার্থক্য না থাকলেও আকিদাগত ও রীতি নীতি কিছু পার্থক্য দেখা যায় এ দুগোত্রের মধ্যে।
ইরান ,ইরাক ,লেবানন -জর্ডান ,ইয়েমেনের বিরাট এক অংশ জুড়ে শিয়াদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।এ ছাড়া এসব দেশে আরেকটি সম্প্রদায় আছে -তারা হলো ইসমাইলী সম্প্রদায়। বস্তুত কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার পর থেকে এ সাম্প্রদায়িক বিভাজন প্রকট হয়ে দেখা যায়। শিয়ারা এখনও মনে করে -ইমাম হোসেন ও তার পরিবারের উপর যে নির্মম হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছিল -তার সুষ্টু বিচার হয়নি এবং ইমাম মাহদী আগমনের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কুসংস্কার বিতাড়িত করবেন।
মুলত শিয়া এবং সুন্নি ইসলামেরই দুটি প্রধান শাখা। তাদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, নবীর মৃত্যুর পর কে তার উত্তরাধিকারী হবেন, এই বিষয়ে তাদের বিশ্বাসের ভিন্নতা। সুন্নিরা বিশ্বাস করে যে, মোহাম্মাদ (সা.) এর মৃত্যুর পর আবু বকর খলিফা (শাসক) হওয়ার যোগ্য ছিলেন এবং নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, আলী (রা.), যিনি মোহাম্মাদ (সা.) এর চাচাতো ভাই এবং জামাতা, তিনিই ছিলেন নবীর প্রকৃত উত্তরাধিকারী। আরও কিছু পার্থক্য রয়েছে:
উত্তরাধিকার:
সুন্নিরা বিশ্বাস করে যে, ইসলামী সম্প্রদায়ের খলিফাদের একটি কাউন্সিল দ্বারা নির্বাচিত করা উচিত। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আলীকে মনোনীত করেছিলেন।
ইমামদের ভূমিকা:
শিয়াদের কাছে ইমামরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা মনে করে, ইমামরা আল্লাহর কাছ থেকে মনোনীত এবং তাঁদের কথা ও কাজ সবই অনুসরণীয়। সুন্নিরা ইমামদেরকে ধর্মীয় নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা করে, কিন্তু তাঁদের ঐশ্বরিক মর্যাদা দেয় না।
আইন ও রীতিনীতি:
শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন ও রীতিনীতিতে পার্থক্য দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতিগত ভিন্নতা রয়েছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:
শিয়া ও সুন্নি বিভাজন শুধু ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন দেশে এই দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ দেখা যায়, যা ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট হয়েছে।
উৎস:
সুন্নিরা সুন্নাহ (নবীর বাণী ও কর্ম) এবং ইজমা (ঐক্যমত্য) কে তাদের ধর্মীয় ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে। শিয়াদের ধর্মীয় ভিত্তি হলো সুন্নাহ, ইজমা, এবং তাদের ইমামদের বাণী ও কর্ম।
শিয়া ও সুন্নি উভয় মাজহাবই এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহতে বিশ্বাসী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে শেষ নবী ও রাসূল মনে করে। কোরআনকেও অবিকৃত মনে করে উভয় মাজহাবই। উভয় মাজহাবই বিশুদ্ধ হাদিসকে মান্য করতে বলে। উভয় মাজহাবই রোজা রাখা, নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেয়া, হজ্ব পালন, অতীতের নবী-রাসূলদের স্বীকৃতি দেয়া, কিয়ামত বা পুনরুত্থানে বিশ্বাস ইত্যাদিকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অংশ মনে করে।
0 মন্তব্যসমূহ