আরবী বছর অর্থাত হিজরী সনের প্রথম মাসকে বলা হয় -মোহরম। আর মোহরমের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। বস্তুত নবী সঃ ওপাতের পর -রাসুলের সাহাবী ইমাম মুয়াবিয়া-(কুফা) বর্তমান সিরিয়ার -তার উত্তরসুরী হিসাবে তার ছেলে ইয়াজিদেক নিযুক্ত করেন। ইয়াজিদ হোসাইন রাঃ আনুগত্য অস্বীকার করে -নিজকে শাসক হিসাবে ঘোষনা করে। কিন্তু বসরা (বর্তমান ইরাক) এর কিছু সংখ্যক সাহাবী তার নেতৃত্ব মানতে অস্বীকার করেন। এবং ইমাম হোসেনের হাতে বায়াত গ্রহনের ইচ্ছা পোষন করেন।
এ খবরের সততা যাচাইয়ের জন্য তিনি দূত ফেরন করেন। সে দুতকে ইয়াজিদের লোকের হত্যা করলে হোসাইন ২০০ লোক নিয়ে বসরার পথে রওয়ানা হন। মূলত কারবালার কাছাকাছি পৌছলে ইয়াজীদ বাহিনী তাদের অবরুদ্ধ করে। কয়েকদিন অবরুদ্ধ করার কর হোসাইন রাঃ সন্ধির প্রস্তাব দিলেও তারা তা প্রত্যাখান করে হোসাইন রাঃ কে তার ৭২ জন সাহাবী সহ আশুরা অর্থাত ১০ মহরম হত্যা করে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ।। ইসলামি পরিভাষায় মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা নামে অভিহিত করা হয়।
শিয়ারা -তখন থেকে এ দিনটিকে ইসলামের জন্য একটি শোকের দিন হিসাবে পালন করে আসছিল। অনেকে মনে করেন -এটাই মহরমের শ্রেষ্টত্ব। আসলে কিন্তু তা নয়। সৃষ্টির আদি থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আশুরার তাৎপর্য স্বীকৃত। হিজরি সনের প্রবর্তন মহররম মাসকে আরও বেশি স্মরণীয় করেছে। কারবালার হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা আশুরা ও মহররমের ইতিহাসে নবচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং মহররম ও আশুরাকে আরও বেশি মহিমান্বিত ও অবিস্মরণীয় করে রেখেছে।
আশুরার উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে—হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ ইত্যাদি। হজরত নূহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রারম্ভ এবং বন্যা অবস্থার সমাপ্তি ছিল আশুরাকেন্দ্রিক।
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া, হজরত ইউনুছ (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্ত হওয়া, হজরত দাউদ (আ.)-এর জালুত বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করা, হজরত আইয়ুব (আ.)-এর ১৮ বছর অসুস্থতার পর রোগমুক্ত হওয়া, হজরত ঈসা (আ.)-কে আসমানে তুলে নেওয়াসহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী আশুরা। (তাফসিরে তাবারি, ইবনে জারির)।
কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২—এর মধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৩৬)। হাদিস শরিফে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘অতিসম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই চার মাসকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৩৬)
0 মন্তব্যসমূহ