মৃত পীরের কি কোন শক্তি আছে কারো উপকার কিংবা ক্ষতি করার ? তার কি আদো সাধ্য আছে টাকা উপভোগ করার ?


তখন আমি বি.এ পড়ি । মিরপুর শাহআলী মাজারর পাশে থাকতাম একটি হোস্টেল। সে হোস্টেলের দারোয়ানের চাকুরী হয়ে যায় মাজারে। দিনে রাতে ৮ ঘন্টা করে তার ডিউটি। একদিন রাতে দেখলাম তার কোমরে এলোমেলো করা অনেক গুলো টাকা। আমার সামনে টাকা গুছিয়ে গুনে দেখলো। সম্ভবত ১৫০০/২০০০ হবে। আমি বললাম মেরে দিলেন নাকি  ? সে বললো নারে ভাই। এ মাসে টাকা ৮ বস্তা টাকা হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখের মত  হবে । আমরা ১২জনে মিলে সারা রাত গুনলাম। এখনও শেষ হয়নি । আজ রাতে আবার গুনা হবে। সকালে আসার সময় সভাপতি সবাইকে এক খামছি করে টাকা দিসে। যার ভাগে যা পড়ছে তাই নিয়া গেছে। না বলে কোন টাকা আনা সম্ভব নয়। তাহলে চাকুরী থাকবে না। 

আমি তখন তার কাছে জানতে চাইলাম।  এ মাজারে টাকা কিভাবে খরছ হয় জানেন কিছু ? সে বললো -বাক্স থেকে টাকা বের করে এ গুলো গুননা করা হয়। এখান থেকে মাজার কমিটি একটি অংশ পায়। মসজিদের হুজুর ও মোয়াজ্জেমকে কিছু টাকা দেয়া হয়। বাকী টাকা মাজারের ফান্ডে জমা হয়। সেখান থেকে প্রতি সপ্তাহে যে শিরন্নী দেয়া হয় সেটাতে খরছ করে -আমাদের বেতন দেয়। থানাতে কিছু টাকা দিতে হয় । প্রতিদিন পুলিশ আশে তাদের ০১টা ফি দিতে হয়। এলাকার নেতা-ফেতারা কিছু অংশ পায়।আমি বললাম সভাপতি কত পায় ? সে বললো সভাপতিইতো ভাগ করে সে কত নেয় এটাতো আর আমরা জানিনা। এ কথা শুনার পর থেকে আমি জীবনে আর কোন টাকা মাজারে দিই নাই। 

কারণ আমি তখনকার সভাপতি চিনতাম। তার আলীসান বাসা ও গাড়ী দেখে আমি প্রায় ভাবতাম -মাজারের খাদেম তিনি এত টাকা দেয় কে তারে ? সেতো কোন পীর না । তাহলে সে টাকা পাই কই। দারোয়ানের থেকে শুনার পর আমার কাছে আরো পরিস্কার হয়ে গেছে -বাজারের সবচেয়ে বড় মাছ এবং মাংশের থলিটা কেন প্রতিদিন তার বাসায় যায়। 

এভাবে প্রতিটি মাজারে দেখবেন মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা দান বাক্সে পড়ে। আপনি যদি কখনও গুলিস্তান যান তাহলে দেখবেন -আসলে কারা মাজারে টাকা দেয়। মানুষ মসজিদে টাকা দেয়না -যাকাত দেয়না ,ফেতরা দেয়না ,গরীব অসহায় মানুষকে টাকা দেয়না -অথচ মাজারে টাকা দিতে একটু দ্বিধা করেনা। এর কারন এসব বেশির ভাগ টাকাই অবৈধ কিংবা হারাম পথে উপার্জিত। তাই মানুষ ভাবে পীর দোয়া করেই দিলেই তার বিপদ কেটে যাবে ? কিন্তু মৃত পীরের কি এ শক্তি আছে কারো উপকার কিংবা ক্ষতি করার ? তার কি আদো সাধ্য আছে টাকা উপভোগ করার ?

এসব জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধর্মীয় গ্রন্থ পড়তে হবে। বস্তুত যারা প্রকৃত ভাবে ধর্ম মানে তারা কখনও মাজারে টাকা দেয়না। কারণ মাজারে দান করার মধ্যে কোন পুর্ণতা নেই। কোরান হাদীসের কোথাও মাজারে টাকা দেবার কথা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে -এতিম ,মেসকিন,ফকির , অসহায় দরিদ্র কিংবা দরিদ্রদের দান করতে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ