গিরীশ চন্দ্র সেন -কোরান শরীফের অনুবাদক নয় - ১৮০৮ সালে বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের অনুবাদ করেন মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া।


গিরীশ চন্দ্র সেন -কোরান শরীফের অনুবাদক নয় -সংকলক কিংবা প্রকাশক। ১৮০৮ খৃষ্টাব্দে সর্বপ্রথম রংপুর জেলার গঙ্গাছড়া উপজেলা চিলখাল মটুকপুর গ্রাম নিবাসী মৌলভী আমির উদ্দিন বসুনিয়া আমপারার কাব্যানুবাদ করেছিলেন। এটা গিরিশচন্দ্র সেন থেকে প্রায় দুই শত বছর আগে। তারও আগে টাঙ্গাইলের করটিয়ার মৌলভী মুহম্মদ নইমুদ্দীন (১৮৩২-১৯১৬) কোরান শরীফের অনুবাদ করেন। তবে তিনিও পূর্ণাঙ্গ কুরআন অনুবাদে সফল হননি।পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরিফের অনুবাদে কৃতিত্ব অর্জন করেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চণ্ডিপুর গ্রামের অধিবাসী মৌলভী আব্বাস আলী (১৮৪৬-১৯০২)। মৌলভী আব্বাস আলী পূর্ণাঙ্গ কুরআন অনুবাদ করেন এবং প্রকাশ করেন ১৯০৭ সালে। এরপর পূর্ণাঙ্গ কুরআন যিনি অনুবাদ করেন, তিনি হলেন- রংপুরের খান বাহাদুর তসলিম উদ্দিন আহম্মদ (১৮৫২-১৯২৭)। তিনি রংপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট (১৮৭৭) কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। খান বাহাদুর তসলিম উদ্দিন কৃত এই মহা-গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ তরজমা ১৮৯১ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২২ বছরব্যাপী তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। এরপর টাঙ্গাইল জেলার মৌলভী আবুল ফজল আবদুল করিম। তিনিও সম্পূর্ণ কুরআনের অনুবাদ করেছিলেন। জানা মতে গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ী বাংলাদেশের নরসিংদীতে। পরবর্তীতে তিনি ভারতে গমন করেন এবং প্রকাশনা ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। গিরিশচন্দ্র ১৮৮৫-৮৭ সালে মহানবী হজরত মোহাম্মদ সা:-এর জীবনীও বাংলায় প্রথম রচনা বা সঙ্কলন করেন। সেই বইয়ের নাম ছিল ‘মহাপুরুষ চরিত’। গিরিশচন্দ্র এই অনুবাদের জন্য আরবি ভাষা শিখেছেন, অনুবাদ করতে গিয়ে ফার্সি-উর্দু ভাষা শিখেছেন। এরপরে তিনি কোরান শরীফ সংকলনে উদ্যোগী হন। গোঁড়া হিন্দু গিরীশ চন্দ্র সেন এক সময় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মধর্ম এ দেশে ছিল একটি নতুন ধর্মমত। এ ব্যাপারে তাঁকে ব্রাহ্মসমাজ হিন্দু ব্যক্তিবর্গ এমন কি ব্রিটিশরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ফলে মানুষ মনে করেছে পবিত্র কুরআন শরীফের প্রথম বঙ্গনুবাদ কারী ব্যক্তিই হচ্ছেন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেন। গিরীশ চন্দ্র কুরআনের অনুবাদ বিক্রি করে যে অর্থ লাভ করতেন তা ব্যয় করতেন ব্রাহ্মধর্ম প্রচার কাজে। ফলে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের মিশনের সাথে কুরআন বিক্রয়ের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। মৌলভী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ছিলেন একজন মুসলমান। তিনি স্বতঃ:প্রণোদিত হয়ে আল কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। তা প্রচারের জন্য গিরীশ চন্দ্র সেনের মতো কোনো মিশন ছিল না। যার কারণে তার প্রচার প্রসার ছিল সীমিত। এমনি করেই আল কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হয়েও মৌলভী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের মতো প্রচার পেতে পারেন নাই। তবে উদ্দেশ্য যাই থাকুক গিরীশ চন্দ্র সেনের সংকলন ধারা মুসলমানরা অনেক উপকৃত হয়েছিল।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ