ভিক্ষা করলেও পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছাড়তে পারিনী পঙ্গূ লোকটি।


 পকেটে খুচরা পয়সা থাকলেই ফকিরদের দান করে দেবার চেষ্টা করি। আগে একটা মাটির ব্যাংক ছিল। মায়ের জন্য সে ব্যাংকটা কিনি।তখন টেবিলের উপরে প্রায় টাকা পয়সা এনে রাখতাম একদিন মা সেটা দেখে বললো-এ পয়সা গুলো জমা করে আমাকে দিলেওতো পারস। আমি হাসলাম। এরপরে বললাম এতে আর ক টাকায় হবে মা। মা বললেন -এক টাকা দুটাকা করে জমালে দেখবি অনেক টাকা হয়ে গেছে। এরপর থেকে খুচরা পয়সা জমাতাম। মা জীবিত থাকতে কোনদিন আর দেয়া হয়নি। মা মারা যাবার পর সেটি ভেঙ্গে বোনদেরকে বন্টন করে দিয়েছি। সম্ভবত ১২০০/১৫০০ টাকা হয়েছিল।

এখন ০১ টাকার নোটের কোন প্রচলন নাই। বাজারে চকলেট ছাড়া ০১ টাকার কোন জিনিষ নাই। ফকিরদের ০২টাকার কয়েন দিলে এমন ভাবে তাকায় মনে হয় অপরাধ করে ফেলচি। তাই ০৫ টাকার নীচে তেমন দেয়া হয়না।
আমাদের মহাখালী বাসার সামনের রাস্তায় -প্রতি শুক্রবার একাধিক ভিক্ষুক দেখা যায়। পকেটে খুচরা পয়সা থাকলে কাউকে ফিরাইনা।আজ সকালে বাসা থেকে বের হলাম রুটি কিনতে। দেখলাম একজন পঙ্গু ভিক্ষুক বাংলাদেশ প্রতিদিন পড়ছে। এক ভদ্রলোক তাকে জিজ্ঞাসা করলো পড়তে পারে কিনা -ভিক্ষুক বললো ১৯৭৬ সালে মেট্রিক পাস করেচে। কোন এক দূর্ঘটনায় পা হারিয়েচে। ছেলেরা খেটে খাওয়া মানুষ।যে যার সংসার নিয়ে থাকে। স্ত্রীও অসুস্থ্য এখন দুজনের সংসার চলে ভিক্ষা করে। সকালে ছেলে বা মেয়ে রিক্সায় করে রাস্তায় দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে ভিক্ষার টাকা দিয়ে নিজে কলা রুটি কিংবা ভাত খায়। আর মাঝে মাঝে মেয়ে এসে কিনে দেয়। আবার সন্ধার দিকে কোন রিক্সা চালকের সহযোগীতায় বাসায় যায়। বা ছেলেরা সময় পেলে নিয়া যায়। যে টাকা পায় তা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়।মানুষ এখন আর ভিক্ষা দিতে চায়না।তবুও না খেয়ে অর্ধ খেয়ে কেটে যায় তার জীবন।
এসব শুনে কিছু বলার ভাষা ছিলনা -শুধু ভেতরটা দুমড়ে মুছড়ে গেল। আহারে জীবন। আহা জীবন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ