
এক লোকের ছিল দুই বউ। সে লোকটি একটা সময় চাকুরী করতো হটাত চাকুরী চলে যাবার পর লোকটি বেকার হয়ে যায়। এ দিকে সংসারের অভাব অনটনও বাড়তে থাকে। লোকটির সাথে বউদের ঝগড়া ঝাটিও বাড়তে থাকে।
একদিন দু বৌ মিলে যুক্তি করলো এ লোকটাকে তারা মেরে সম্পত্তি ভাগাভাগি করে নিবে। লোকটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মেরে ফেলাই হবে শ্রেয়।কথামত একদিন দু জনে মিলে লোকটিকে বললো-তোমার যেহেতু কাজকর্ম নেই -তুমি শহরে চলে যাও। যতদিন পর্যন্ত তুমি আয় রোজগার না করতে পারবে ততদিন আর বাড়ী ফিরবে না। লোকটি বৌদের কথায় রাজি হয়ে শহরে রওয়ানা দিলো।
এদিকে দু বৌ তাকে পথে খাবার জন্য কিছু চিড়ামুড়ী ও কলার সাথে বিষ মিশিয়ে দিল। লোকটি এক বনের ভেতর দিয়ে চলতে লাগলো। পথি মধ্যে তার ক্ষুধা পেল। সে একটি পুকুর ঘাটে খাবারের পুটলিটি রেখে পুকুর নামলো হাত মুখ ধুইতে । ইতোমধ্যে রাজবাড়ীর হাতী এসে সে কলা খেয়ে ফেললো এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতিটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। লোকটি পুকুর থেকে উঠে দেখে হাতির সামনে খাবারের পুটলিটি পড়ে আছে আর হাতি চিত হয়ে শুয়ে আছে। লোকটি রাগে পা দিয়ে হাতিটিকে লাথি দিতে লাগলো --তুই আমার কলা খাইলি কেন ?
রাজ দরবারে ইতোমধ্যে খবর চলে যায় ,এক বীর রাজ্যের হাতি লাথি দিয়ে মেরে ফেলেছে। যথারীতি তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় -রাজ দরবারে।
রাজার সামনে লোকটিকে হাজির করা হলো রশি দিয়ে বেঁধে। দেখেতো রাজা ক্ষেপে গেলেন ,বললেন আমি তোমাদের বলেছি লোকটাকে আমার সামনে নিয়ে আস, তাকে আমি এক নজর দেখতে চাই । আর তোমরা তাকে নিয়ে এলে রশি দিয়ে বেঁধে ? সে যে অসাধ্য সাধন করেছে তা কয়জনে পারে ? সেতো জাতীয় বীর। তার মত একজন সাহসী লোকইতো আমার দরকার। একটা হাতি গেছেতো কি হয়েছে ,আমার রাজ্যে কি হাতীর অভাব আছে ? কিন্তু এমন বীর-তো আমি আর খুঁজে পাবনা।
লোকটি তখন বললো হুজুর আমি নিরপরাধ ,আমি কিছু করিনি আমার খাবার খেয়ে ফেলায় রাগের মাথায় দুটা লাথি দিয়েছি মাত্র। রাজা হেসে বললেন -বাহ তুমিতো যথেষ্ট সাহসী পুরুষ। মাত্র দুটো লাথি দিয়েই হাতি মেরে ফেলেছো - তুমি আমার রাজ্যের গৌরব -তোমাকে আমি অবশ্যই বীরের মর্যদা দেব । এমন একজন লোক আমি বহুদিন থেকে খুজছি। আজ থেকে তুমি আমার শাহী মেহমান খানায় থাকবে। এ বলে রাজা দরবার ছেড়ে চলে গেল। লোকটিরও খাতির যত্ম শুরু হয়ে গেল।
লোকটিকে একটি কক্ষে আদর যত্ম সহকারে রাখা হলো। সে মনে মনে ভাবতে থাকে আসলে হচ্ছেটা কি। আমার পায়ের আঘাতে সত্যিই কি হাতি মারা গেছে ? আমার গায়ে কি আসলেই এত শক্তি আছে ? লোকটি নিজের শক্তি পরীক্ষা করার জন্য দেয়ালে পা দিয়ে আঘাত করে , ব্যথা পায় -হাত দিয়ে আঘাত করে -ব্যথা পায়। না শক্তি-তো নেই তাহলে হাতি মরলো কেমন করে ? এদিকে রাজদরবারের এক খানসামা তার জল খাবার নিয়ে উপস্থিত হতেই দেখে রাজকীয় বীর দেয়ালে লাথি মারছে। সেতো খুব ভয় পেয়ে গেল, নিশ্চয় তার খাবার আনতে দেরি হয়েছে তাই -মেহমান ক্ষেপে গেছে ---
ভয়ে ভয়ে সে বললো -গোস্তাকি মাপ করবেন -জনাব -খাবার আনতে একটু দেরি হয়ে গেল। বলুন আপনার আর কি চাই। লোকটি চিৎকার দিয়ে বললো -আমি মুক্তি চাই , আমি আমার ফ্যামিলির কাছে ফিরে যেতে চাই। মুহূর্তেই খবর চলে গেল রাজার কাছে। মহাবীর একা থাকতে চাননা -তার ফ্যামিলি সাথে থাকতে চান। রাজা হুকুম দিলেন -তার ফ্যামিলিকে যেন সসম্মানে রাজ দরবারে নিয়ে আসা হয়।
যে কথা সেই কাজ। দুই বৌকে নিয়ে আসা হলো রাজ দরবারে। তারাতো মহা-খুশী কিন্তু তাদের স্বামীকে দেখে তারা চিন্তায় পড়ে গেল। বিষে কি তাহলে কাজ করেনী? এক সতিন আরেক সতিনকে দোষারুপ করতে লাগলো তাহলে কি তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিস ? স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিষ ফেলে দিয়েছিস --? এ সময় খানসামাদের আগমনে তারা চুপ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারলো তাদের স্বামী এখন জাতীয় বীর এবং তারা বীরের বৌ হিসেবে তারা শাহী মেহমান খানায় থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। লোভি দুই মহিলা-তো এবার আরো অভাক ! কিভাবে সম্ভব হলো এটা।
রাতে তারা স্বামীকে বললো -ওগো বলনা তুমি রাজার হাতিকে কিভাবে বদ করলে। স্বামী তখন বলে -বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি। তোমরা আমাকে যে খাবার দিয়েছিলে সেটা ঐ হাতিটা খেয়ে ফেলেছে। আমি ক্ষুধায় অস্থিয় হয়ে রাগের মাথায় দু-তিনটি লাথি দিয়েছি। এর বেশি কিছু করিনি। দু সতিন তখন বুঝে যায় -আসলে কি ঘটেছে। তারা এখন স্বামীকে বলে তুমি আসলেই একজন বীর আমরা তোমাকে না বুঝ কত বকাঝকা করেছি। আমাদের তুমি ক্ষমা করে দেও। তোমার ভেতরে আসলেই বীরত্ব লুকিয়ে আছে।
এদিকে রাজ দরবারের সুযোগ সুবিধা পেয়ে দু সতিন ঈর্ষা কাতর হয়ে পড়ে। একে অপরকে হিংসা করতে থাকে। একদিন রাতে দু সতিনের ঝগড়া লেগে যায়। একজনে বলে আমি বিষ দিয়েছি বলেই আজ তোমার ভাগ্য খুলে গেছে -আরেকজনে বলে আমি বুদ্ধি দিয়েছি বলেই -আজ তোমার কপালে রাজ দরবারের খানা জুটেছে তা-নাহলে হাতিও মরতো না -স্বামীও বীর হতে পারতো না। রাজ কর্মচারীরা এ গোপন তথ্য রাজাকে জানায় । পরের দিন বিচার হয় -বিচারে দু মহিলাকে মৃত্যু দণ্ড দেয়া হয় এবং ঐ নিরীহ লোকটিকে তার সরলতার জন্য রাজকর্মচারী হিসেবে অন্তভুক্ত করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ