ইরাম নগরীতে সাদ্দাদ এর বেহেস্ত খানা

 



বাইবেল এবং কোরানে সাদ্দাদ এর বেহেস্ত খানা তৈরির বিবরণ পাওয়া যায়। কাসাসুল আম্বিয়ার বর্ণনানুযায়ী নবী হুদ আঃ ইরামের রাজা সাদ্দাদকে পৌত্তলিকতা ছেড়ে ঈমান আনার জন্য আহবান করেন। তখন সাদ্দাদ তাচ্ছিলের সুরে বলেন -আমি যদি ঈমান আনি তাহলে কি হবে . নবী হুদ আঃ তখন বেহেস্তের বর্ণনা করেন এবং খারাপ কাজের জন্য দোযখের ভয় দেখান।   শুনে সাদ্দাদ বলেন এ রকম বেহেস্ত দোযখ  আমি নিজেও তৈরি করতে পারি।

কথিত আছে দক্ষিন ইয়েমের পূর্বাঞ্চল এবং ওমানের পশ্চিঞ্চলের আদনান শহরের এক বিশাল এলাকা জুড়ে সাদ্দাদ বেহেস্ত তৈরি করা শুরু করেন। ১৪০ মাইল বর্গাকার এলাকা জুড়ে এ নির্মান কাজ শুরু করেন । চারদিকের দেয়ালের উচ্চতা ছিল ৭৫ফুট এবং প্রশস্ত ৩০ ফুট। ভেতরে প্রাসাদ তৈরি করেন প্রায় তিন লক্ষাধিক। নির্মান সময় ধরা হয় ১০০ বছর । কাজ করেন প্রায় ৩০হাজার শ্রমিক।

 এসব প্রাসাদ তৈরি করার জন্য সাদ্দাদ রাজ্যের যাবতীয় ধন সম্পদ এনে জড়ো করেন  এবং পাশ্ববর্তী রাজ্য থেকে ধন সম্পদ এনেও জড়ো করতে থাকেন। রাজ্যে তিনি ঘোষনা দেন -যার কাছে যাই সম্পদ এবং সোনা রুপা আছে সব যেন রাজ কোষাগারে জমা দেয়া হয়। পরবর্তীতে কারো কাছে এ সম্পদ পাওয়া গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। 

চল্লিশ গজ নিচ থেকে মর্মর পাথর দিয়ে বেহেশতের প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপন করা হলো। আর তার উপর সোনা-রুপানির্মিত ইট দিয়ে প্রাচীর বানানো হলো। বর্ণিত আছে, কৃত্রিম গাছও শাদ্দাদ বানায়, যার শাখা প্রশাখাগুলো ছিল ইয়াকুত পাথরের, আর পাতাগুলো নির্মিত হয়েছিল 'ছঙ্গে-জবরজদ' দিয়ে। আর ফল হিসেবে ঝুলছিল মণি মুক্তা আর হীরা জহরত। আর মেঝে ছিল চুন্নি পান্নার মতো মূল্যবান পাথরের, সাথে মেশকের ঘ্রাণ। স্থানে স্থানে ঝর্নাধারা ছিল দুধ, মদ আর মধুর। আর চেয়ার টেবিল ছিল লক্ষাধিক, সবই সোনার তৈরি। 

যাই হোক বেহেস্ত খানা তৈরির পরে -সেদিন সে প্রাসাদ উদ্ধোধন করা হবে। সে দিনই আল্লাহর নির্দেশে সাদ্দাদ এর জান কবজ করা হয়। বর্ণনা মতে সাদ্দাদ ঘোড়া থেকে নামতে যাবে তখনই এক অপরিচিত ব্যক্তি তার সামনে এসে দাঁড়ায়। তখন সাদ্দাদ বলে তোমাকেতো আগে কখনও এখানে দেখেনি -তুমি কে কি চাও তখন আগন্তুক বলে। আমি মালাকুল মাওত। আল্লাহর আদেশে এসেছি তোমার জান কবজ করতে। সাদ্দাদ অনেক অনুনয় বিনয় করে। কিন্তু ঘোড়া থেকে এক পা মাটিতে ফেলতেই তার জান কবজ করা হয়। 

ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনেও উল্লেখ আছে এ নগরীর, "তুমি কি ভেবে দেখনি তোমার প্রতিপালক আ'দ জাতির ইরামে কী করেছিলেন? তাদের ছিল সুউচ্চ সব স্তম্ভ, যেমনটি পৃথিবী কোনোদিন দেখেনি আগে।" (কুরআন, সুরা ফাজর, ৮৯:৬-৮)

কথিত আছে -সাদ্দাদ বেহেস্ত খানা পরবর্তীতে মরু ঝড়ের কবলে পড়ে তলিয়ে যায়। কেয়ামতের পূর্বে এ প্রাসাদ গুলো আবার জেগে উঠবে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ