তখন আমাদের ঘরে কারেন্ট ছিলনা।হাত পাখাই আমাদের ভরসা ছিল। রাতে আমি বাবার সাথে শুইতাম।যখনই কোন কারনে জেগে যেতাম -দেখতাম বাবা হাত পাখা ঘুরাচ্ছে।বড় হবার সাথে সাথে এ বিষয় নিয়ে আমি চিন্তিত হযে পড়ি-বাড়ী ছেড়ে যখন লজিং এ থাকতাম তখনও বাড়ী আসলে বাবায় ডেকে কাছে শোয়াতো।
বাবায় বলতো গরমে সিদ্ধ হয়ে যাবি আমার কাছে আয় আমি বাতাস করে দিব।একদিন বাবা সাইকেল এক্সিডেন্ট করে পায়ে ব্যথা পায় কোন কারনে রাতে বাবায় পায়ের সাথে আমার পা লেগে যায় -বাবা উহঃ করে উঠে আমি ভয় পেয়ে যাই। এরপর থেকে আর বাবার সাথে শোয়া বাদ দিয়েছি।
গরমে আমার গায়ে প্রচুর ঘামাছি উঠতো। মায়ের কাছে গিয়ে বলতাম -মা ঘামাছি খুটে দাও।মা টুক টুক করে পাকা ঘামাচ্ছি গুলো খুটে দিত। আমি অন্য রকম একটা স্বস্তি অনুভব করতাম। যখন বড় হয়েছি তখনও এই অভ্যাসটা যায়নি। অসুস্থ্য মায়ের পাশে শুয়ে কথা বলতাম আর মা-পিঠ চুলকিয়ে দিত ---।মা মারা যাবার পর আমার পিঠ এখন নিজেই চুলকাই।মাঝে মাঝে বোনদের নাগালে পেলে বায়না ধরি-আমার পিঠের ঘামাছি খুটে দে-বোনরা হাসে আর বলে -মা চলে গেলেও তোর এ অভ্যাস এখনও যায়নি।
আমাদের গ্রামের ঘর টিনের। ঘরের উপরে গাছের ছায়া । মাঝে কাঠের দরমা /পাঠাতন দেয়া। শহরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত গরম অনেক কম। তবুও কারেন্ট সংযোগ পাবার সাথে সাথে মায়ের জন্য চার্জার ফ্যান এবং রুমে রুমে সিলিং ফ্যান কিনে দিয়েছি।মা মারা যাবার পর থেকে চার্জার ফ্যান গুলো অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হয়ে গেছে। বাবার জন্য যথা সাধ্য সব কিছুই করে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে বাড়ী গিয়ে দেখি- বাবায় ফ্যানের নীচে বসেও হাত পাখা ঘুরায় এসব দৃশ্য দেখলে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে। মায়ের কথা মনে পড়ে ----।
আমার অফিসে এসি আছে বাসায় নেই। বাসায় এসি লাগানোর কথা আসলে আমার কেবলই মনে হয়-মা বাবা এসি কি জিনিষ জীবনে দেখেনি। তাহলে আমার এত বিলাসিতার দরকার কি ? আমার মত লক্ষ কোটি মানুষ আছে যাদের ঘরে ফ্যানও নেই।তাহলে আমার কেন এত সুখে থাকতে হবে। কি দরকার এ কৃ্ত্রিম জীবন দিয়ে। মৌলিক আছি বেশ ভালোই আছি।

0 মন্তব্যসমূহ