আয়নাঘর পর্ব-০৪
নেত্রো-নিউজ মালেয়শিয়াতে থাকা যে ছেলেটির সাক্ষাতকার নেয়। তার বাড়ী ছিল গাজীপুর মাওনায়।তার কিছুদিন আগে সে মালেয়শিয়া থেকে ঢাকায় আসে। হটাত একদিন মাওনা চৌরাস্তায় তাকে কয়েকজন লোক তার নাম জিজ্ঞাসা করে। সে নাম বলার পর বলে-আমরা আইনের লোক ,স্যার গাড়ীতে বসা আছে। আপনাকে স্যার ডাকছে। ছেলেটি গাড়ীর কাছে এলেই তাকে জোর করে গাড়ীতে উঠিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়া হয়।তাকে চুপ থাকার জন্য বলা হয়। সে কথা বলতে চাইলে তাকে আঘাত করা হয়। সে প্রথমে ভেবেছিল এরা ডাকাত পরে আশ্বস্থ হয় যে তারা আইনের লোক।গাড়ীতে চলে তার জিজ্ঞাসাবাদ কোথায় থাকে কি করে বাড়ীতে কে কে আছে মালেয়শিয়া কি করে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা পর্যায়ে এয়ারপোর্টে আসলে সে গাড়ির কট্রাকটারের শব্দ শুনে বুঝতে পারে কোথায় আচে। এরপর তাকে নেয়া হয় এমি এইচ এর আশে পাশে। এর বেশি সে বলতে পারেনা।কয়েকজন অফিসার মিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে তারা জিজ্ঞাসা করে সে কিছুদিন আগে গোপালগঞ্জে---অমুকের কাছে গেছে কিনা। দিনাজপুরে তার পরিচিত কেউ আছে কিনা। সে বলে আমি এ নামের কাউকে চিনিনা। দিনাজপুরে আমি জীবনে কোনদিন যাইনি। এভাবে দিনে রাতে তাকে টর্চার করা হতো প্রায় ০১ সপ্তাহ ধরে কিন্তু তার কাছ থেকে কোন তথ্য তারা খুঁজে পায়নি। এক পর্যায়ে তাদের মনে হলো তারা ভুল লোককে ধরে এনেছে। ওদিকে তার স্বজনরা তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে। থানাতে ডায়রি করে কিন্তু কোথাও তার হদিস মিলেনা।
তার বর্ণনায় উঠে আসে আয়না ঘরের দৈর্ঘ্য প্রস্থ এবং সেখানে রুমে রুমে থাকা একাধিক লোকের আহাজারি। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে উল্টো করে বেঁধে পিটাতো। তাদের চিৎকার। দীর্ঘদিন বন্ধী থাকা লোকের কান্না।তাকে প্রথমে মাটির নিচে যে অন্ধকার ঘরে রাখে। ঘরে এতটাই অন্ধকার যে দিনরাত বুঝা যেতনা। ৮/১০ ফুট ওয়ালের উপরে একটা ভেন্টিলেশান আচে। অনুমান করা যায় যে ঘরের পিছনে মাঠ। মাঠের ওপাশে বড় বিল্ডিং। আশে পাশে তেমন কোন শব্দ পাওয়া যেতনা তবে বিমানের শব্ধ আসতো কনা ঘেঁষে এতে সে অনুমান করে যে এটি বিমান বন্দরের রানওয়ের আশে পাশে। প্রথমদিন তাকে যে ঘরে নিয়ে রাখে সেখানে সে আবিষ্কার করে আরেকজন লোককে। তার চোখও বাধা। সেও জানেনা তাকে কেন ধরে আনা হয়েছে। তবে সে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিল। এরপর তাকে একটি আলাদা রুমে নিয়ে রাখে। যাতে কোর রকম শোয়া যায়। রুমে কোন বাতি নেই। একটা লোহার শক্ত দরজা। যেখানে খাবার সময় হলে দরজার ফাক দিয়ে খাবার দিয়ে যেত। আবার জিজ্ঞাসাবাদের সময় চোঁখ বেধে নিয়ে যেত। সৈন্যদের কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা কোন জবাব দিতনা। বাথরুমের প্রয়োজন হলে একজন সৈন্য এসে চোখ বেঁধে নিয়ে যেত।বাথরুমের দরজার সামনে চোখ খুলে দিত । বাথরুম শেষ হলে আবার সৈন্য এসে চোখ বেঁধে নিয়ে যেত। বাথরুমের ভেতর সে আবিষ্কার করে কয়েকটি নামও মোবাইল নাম্বার।একটি মোবাইল নাম্বার সে নেত্র-নিউজকে দেয়।যেখানে নাম্বারের নিচে লেখা চিল মা --। ছেলেটি সে মোবাইল নাম্বারটি মুখস্থ করে পরে নেত্র-নিউজকে দেয়।যাতে দেখা যায় ০৬ মাস আগে নিখোজ হওয়া এক ব্যক্তি এই আইনাঘরেই জীবিত আচে।
যাইহোক এভাবে ০৩ মাস কেটে যায় তার। তাদের ভুল ভাঙ্গে একদিন ভোরে তাকে বলে তোমাকে আজ ছেড়ে দিব। কিন্তু তুমি যদি কারো কাছে কিছু বল তাহলে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে আর কি কি বলতে হবে সেটাও শিখিয়ে দেয়। ছেলেটি তাদের কথায় সাঁয় দেয়। ঐদিন ভোর ০৪টার তাকে ফেলে আসে শালনা বনের পাশে। এক সৈন্য তাকে ভাড়ার টাকা ও তার মোবাইল ফেরত দিয়ে বলে পিছনে না তাকিয়ে সামনে যেতে। জীর্ণ শীর্ণ শরীর নিয়ে সে সামনে কতদূরে হেটে এসে পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।
এরপর ভয়ে সে কারো কাছে কিছু বলেনি। এক মাসের মাথায় চলে যায় মালেয়শিয়ায়। খালেদ মহি উদ্দিন এ নিউজের সূত্র ধরে কয়েকজন সেনা অফিসারের সাথে কথা বলেন। এর মধ্যে এক অফিসার জানান -যাকেও আয়না ঘরে রাখা হয়েছিল -আজমী এলাহি স্যারকে আমি একদিন দেখেছি। উনি আয়না ঘরেই আছেন। গত সপ্তায় দীর্ঘ ১০ বছর শেষে তিনি বের হয়ে আসেন।
চলবে ----।

0 মন্তব্যসমূহ