নাম ক্যাথরিন পেরেজ শকদাম। জাতিতে ফরাসি নাগরিক, ধর্মে ইহুদি। পড়াশোনা লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে (LSE), পরে মধ্যপ্রাচ্যর রাজনীতি নিয়ে গবেষণায় মন দেন। রাজনীতিতে ছিলেন বামপন্থী, মার্ক্সবাদী। আমি যে সবসময় বলি মার্ক্সবাদ আসলে রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করার জন্য ডিপ স্টেটস এর একটা অস্ত্র ছাড়া কিছুই না, এই ভদ্রমহিলার ঘটনাই তার অন্যতম প্রমাণ।
যাইহোক, ক্যাথরিন শকদাম ইজরায়েল - প্যালেস্টাইন বাওয়াল নিয়ে সিরিয়াস পড়াশোনা আরম্ভ করে, ধীরে ধীরে ইজরায়েল এর দোষ বুঝতে পারে, বিভিন্ন দেশের মুসলিম বন্ধুদের সাথে মিশে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয় আর একসময় শিয়া ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। সেটা ২০১৩ সাল। শকদাম ঘোষণা করেন যে, ইসলামে তিনি পেয়েছেন “অন্তরঙ্গ আত্মিক মুক্তি ও মানবতার চূড়ান্ত দর্শন”।
ভদ্রমহিলা সরাসরি ইরানে চলে যান। সেখানে শাসক শিবিরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ইরানি বিপ্লবের আদর্শ অর্থাৎ "বিলায়তে ফকিহ" বা শাসকের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের মতবাদ এর অন্যতম বড় প্রচারক হয়ে ওঠেন তিনি। আর একজন ইহুদি নারীকে নিজেদের হয়ে প্রচার করতে দেখে ইরানও তাকে লুফে নেয়। লেখালেখি ও প্রোপাগান্ডার তিনি একেবারে সেলেব্রিটি হয়ে ওঠেন ইরানে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেইয়ের ওয়েবসাইটে পর্যন্ত তার লেখা ছাপা হয়।
এরপর শুরু হয় ইরানের সব প্রথম শ্রেণীর নেতা আর জেনারেলদের সাথে তার মেলামেশা। রেভল্যুশনারি গার্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে তার দেখাসাক্ষাৎ হয়। খোদ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তাকে সাক্ষাৎকার দেয়। এমনকি সামরিক আলোচনা নিয়ে অনুষ্ঠানেও তাকে ডাকা হতো।
এর বাইরেও এইসব সুযোগেই ভদ্রমহিলা ঢুকে পড়ে বড় বড় ইরানি অফিসার, পলিটিশিয়ান, বিজ্ঞানী আর ধর্মীয় নেতাদের ঘরের মধ্যে। তাদের ওয়াইফদের সাথে বন্ধুত্ব পাতায়। তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে আর সেইসব স্ত্রীদের থেকেই আদায় করে নেয় তাদের স্বামীদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। স্বামীরা কখন বাড়ি থেকে বের হয়, কখন আসে, কোথায় যায় ইত্যাদি ইত্যাদি সব তথ্য।
আর এই তথ্যই চলে যেত সরাসরি মোসাদের হাতে। সেইসব তথ্যের উপর ভিত্তি করেই নিখুঁতভাবে মোসাদ টার্গেট কিলিং করতে থাকে সেনা অফিসার, পরমাণু বিজ্ঞানী আর রকেট ইঞ্জিনিয়ারদের! একের পর এক এমন নিখুঁত মার্ডারে ইরানের যখন মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা, তখন তদন্তে ধরা পড়ে যে সব মার্ডারেই একটা কাকতালীয় মিল আছে আর সেটা হলো তাদের সবার স্ত্রীরাই ক্যাথরিন এর সাথে ঘনিষ্ঠ ছিল।
পরিচয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ক্যাথরিন ইরান ছেড়ে পালিয়ে যায়। ইরানি গোয়েন্দারা যখন পুরোপুরি শিওর হয়েছে এই ইন্টেলিজেন্স নিয়ে, ক্যাথরিন ততক্ষণে ফ্রান্সে পৌঁছে গেছে।
ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ক্যাথরিন সরাসরি জানিয়ে দেন যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে। তিনি মুসলিম ছিলেন না। সব কিছু ছিল এক ছদ্মবেশ। (I adopted Islam as a political weapon” & “I wasn’t a Muslim — it was all a disguise)
শাকদাম ফ্যান্সে ফিরে ধর্মান্তরিত হবার বিষয়টি -স্রেফ কাজের অংশ হিসাবে উল্লেখ করেন। এরপর সে আবার ইহুদী ধর্মে ফিরে যান এবং ইহুদীদের বিভিন্ন সংস্থার সাথে কাজ করে তাদের অধিকার ইহুদী রাষ্ট্রের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তিনি স্বীকার করেন যে -আমেরিকান ভিত্তিক একটি সংস্থার হয়ে তিনি কাজ করেছেন তবে তিনি নিজকে মোসাদের এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দিতে অস্বীকার করেন।
0 মন্তব্যসমূহ